Tuesday, May 28, 2019

এই জীবন যদি জীবন হয় তাহলে আসল জীবন কোথায়?

এই জীবন যদি জীবন হয় তাহলে আসল জীবন কোথায় : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
০৭ এপ্রিল ২০১৯, ১২:১৬
প্রথম আলো
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সমাবর্তনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। গত ২৮ মার্চ ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) সমাবর্তনে বক্তা ছিলেন তিনি।
আমি প্রথমেই একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে আমার কথার শুরু করি। গল্পটা এ রকম যে, এক হাসপাতালে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে এক রোগী এল। সঙ্গে সঙ্গে তার এক্স-রে করা হলো। কিন্তু একি! রোগীর পেটের মধ্যে শত শত চায়ের চামচ দেখা গেল। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তোমার পেটে এত চায়ের চামচ এল কী করে?’ সে তখন কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিল, ‘স্যার, ওই যে বিখ্যাত ডাক্তার কাদির সাহেব, এফসিপিএস, এমআরপিএস বলেছেন দিনে দুই চামচ করে তিনবার খেতে।’
তো আমরা এই ডাক্তার কাদির সাহেবের মতো মানুষ দ্বারাই আসলে পরিচালিত হই। তারা যা বলেন, আমরা তা-ই করি। আমরা কখনো দেখি না চায়ের চামচ খাওয়া ভালো, না খারাপ। এটা আমরা ভাবি না। এতে আমাদের কোনো ভালো-খারাপ কিছু হয় কি না, সেটা আমরা বুঝতে পারি না। আমাদের জীবনে এই ডাক্তার কাদির কারা? এই কাদির হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক, আত্মীয়, আমাদের বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীসহ গোটা পৃথিবী। তারা আমাদের যা করতে বলেন আমরা তা-ই করি। যেমন: আমার আব্বার কাছে শুনেছি যে তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত তখন বলা হতো যে গণিত আর দর্শনই সেরা বিষয়। তাই এ দুটো পড়তে হবে। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিলাম, তখন যুগ পাল্টে গেল। তখন সেরা হলো ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং। আবার মানবিকের শিক্ষার্থী হলে ইংরেজি অথবা অর্থনীতি। কারণ ওই দুটো দিয়ে সিএসপি হওয়ার সুবিধা ছিল। তারপর আরও সময় পার হলো। এখন এসে দাঁড়িয়েছে বিবিএ, এমবিএ। একের পর এক চাপের মধ্যে আমরা পিষ্ট হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা এর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছি না। কোনোকালেই আসলে কেউ কিছু করে উঠতে পারেনি। আমি কী চাই, আমি কী করতে ভালোবাসি, আমার প্রাণ কী চায়, আমার জীবনের আনন্দ কোথায়—এই খবর কেউ নিতে আসে না। ফলে আমরা সারা জীবন ধরে আমাদের হৃদয়ের সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাই।
আমরা আমাদের কোনো দিন চিনতে পারি না। নিজেদের কোনো দিন খুঁজে বের করতে পারি না। আমরা আমাদের আনন্দজগৎকে তাই কোনো দিন আত্মস্থ করতে পারি না। অবশ্য এ রকম হওয়ার কারণ আছে। কেন আমাদের এসব বলা হয়? একটা কারণ হলো দারিদ্র্য। আমাদের দেশে কিছুসংখ্যক মানুষ ছাড়া বাকি সব মানুষ দারিদ্র্যসীমার এত নিচে থাকে যে নিজের ইচ্ছামতো কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। নিজের প্রাণের খোরাক জোগানোর সুযোগ আমরা কমই পাই। সুতরাং যেখানে অর্থ আছে, যেখানে টাকা আছে সেখানে আমাদের চলে যেতে হয়। সেটা আমাদের ভালো লাগুক আর না-ই লাগুক।
আরেকটা সমস্যা হলো আমাদের বাবা–মাকে নিয়ে। যেমন আমরা ১১ ভাইবোন ছিলাম। আমার দাদারা ছিলেন মাত্র ১৮ ভাই এবং ১৪ বোন। এত ছেলে-মেয়ে সেকালে থাকত যে বাবা-মা তাদের ঠিক দেখেশুনে রাখতে পারত না। তাই তাদের নিয়ে তেমন কোনো চাপ ছিল না। তারা নিজেদের যা ইচ্ছা তাই হতে পারত। কিন্তু আজকে ছেলেমেয়ের সংখ্যা ২–এ নেমে এসেছে। সব সময় বাবা-মায়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যে তাঁর ছেলেমেয়ে কী করছে। আজকের ছেলেমেয়েরা যেন বন্দিশালাতে আটকে আছে। সর্বদা নজরদারির কড়া শিকলে বন্দী তারা। আজকের মতো অত্যাচারিত শিশু আমাদের দেশে কখনো ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা, বাবা-মা যা হতে পারেননি, ওই ১-২ জন ছেলেমেয়ে দিয়ে তারা তার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এটা তো বড় কঠিন কাজ। এই বাচ্চা ছেলেমেয়ে কীভাবে এই বড় দায়িত্ব পালন করবে।
এরপর এল চাকরি। চাকরি এক মজার জায়গা। এখানে বাণিজ্যিক প্রভুরা তাঁদের মর্জি চালান। তিনজন মানুষ লাগবে। নেবে একজন। তাকে আবার বেতন দেবে দুজনের। তাতে টাকার পরিমাণ বাড়ে। সাথে যে চাকরি পেল সে নিজেও এত টাকা পেয়ে খুশি হয়। কিন্তু সকাল আটটায় অফিসে ঢুকে রাত ১০টা নাগাদ বাসায় ফেরার পর তার মনে আর কোনো শান্তি থাকে না। বাড়ির টেলিভিশনের সামনে টাইটা খুলে দিয়ে সে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে। এই দৃশ্যটা দেখতে মোটেও ভালো লাগে না। তাদেরকে চিপে, পিষে তাদের সমস্ত রক্ত আমরা নিয়ে যাচ্ছি। ঊনবিংশ শতাব্দীতেই এটা নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। তখন কবি বলেছিলেন,
‘হোয়াট ইজ লাইফ ইফ ফুল
অব কেয়ার
উই হ্যাভ নো টাইম টু স্ট্যান্ড
অর স্টেয়ার’
এই যে ঊর্ধ্বশ্বাস জীবন, এই যে কাজ, এই যে ব্যস্ততা—এসব মিলিয়েই কি আমাদের জীবন? আমরা কি একটু দাঁড়াতে পারব না? আমরা কি একবার এই চারপাশের সুন্দর পৃথিবীর দিকে তাকানোর সুযোগ পাব না? এত অসাধারণ–অবিশ্বাস্য পৃথিবীতে আমরা যে এসেছি, সেটার কোনো আনন্দ কি আমরা নিতে পারব না? কেন এই কথা হয়েছিল? ১৮১৯ সালের দিকে ইংল্যান্ডে একটা আইন পাস হয়েছিল। কাউকে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। কী রকম মারাত্মক আইন আপনি চিন্তা করুন। তখন হয়তো ২২ ঘণ্টা খাটানো হতো। হয়তো কর্মীকে তারা ঘুমাতেই দিত না। এ রকম ভয়ংকর নির্যাতনও সেই সময়ে করা হয়েছে মানুষের ওপর। এই যে ‘মে ডে’তে শিকাগোতে শ্রমিকদের ওপরে গুলি করা হয়েছিল। শ্রমিকেরা কী চেয়েছিল? শুধু ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা ঘুম আর ৮ ঘণ্টা আনন্দ করার সুযোগ চেয়েছিল। কিন্তু প্রভুরা বলেছিল যে ৮ ঘণ্টা আনন্দ করা চলবে না। সেটার ভেতর ৬ ঘণ্টা তাদের জন্য কাজ করতে হবে। এই নিয়ে শেষ পর্যন্ত এ রকম দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।
আমি আরেকটা ছোট্ট গল্প দিয়ে শেষ করি। পথে যেতে যেতে একজন যুবকের সঙ্গে দেখা হলো অপূর্ব এক সুন্দরীর। সুন্দরীকে দেখেই সে প্রেমিক যুবক বলে বসল, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।’ আবার সুন্দরীরও এই যুবককে অপছন্দ নয়। তারও ভালো লেগেছে। কিন্তু সে বলল, ‘আমি একটু অসুবিধায় আছি। আমার বাড়ি হলো সাত সমুদ্রের ওপারে। আমি আমার বাবার সঙ্গে সেখানে যাচ্ছি। এখন তো আর আমাদের বিয়ে সম্ভব নয়। তুমি সেখানে এসো। তখন আমি এই বিষয়ে ভেবে দেখব।’
যুবক তো আর অপেক্ষা করতে পারল না। কিছুদিন পরেই সে সুন্দরীর জন্য সাত সমুদ্রের উদ্দেশে পাড়ি জমাল। প্রথম সমুদ্রের পাড়ে সে যখন গেল, সেখানে এক খেয়া মাঝি সাগর পার করে দেবে। সেই খেয়া মাঝি তাকে বলল, ‘আমি চাইলেই তোমাকে এই সমুদ্র পার করে দিতে পারি। কিন্তু এ জন্য তোমাকে তোমার হৃৎপিণ্ডের সাত ভাগের এক ভাগ দিয়ে দিতে হবে।’ সে ভাবল যে তার এত গভীর প্রেম। প্রেমের জন্য না হয় একটু ত্যাগ স্বীকার সে করলই। সে রাজি হয়ে যায় মাঝির কথায়। পার হলো সে প্রথম সাগর। দ্বিতীয় সাগরের খেয়া মাঝিও একই কথা বলল। এভাবে দিতে দিতে সাত সমুদ্র সে যখন পার হলো তখন দেখা গেল তার মাঝে হৃদয় বলে আর কিছুই নেই। তার হৃদয় খণ্ড খণ্ড হয়ে হারিয়ে গেছে।
এই যে আমাদের সময়ের ওপর যে নিষ্পেশন, যে টানাপোড়া চলে এই আমাদের ব্যস্ত জীবন নিয়ে, সেটা আমাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনে না। আমাদের জীবন যে আনন্দের এক নতুন উৎস, সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে। জীবনের এই আনন্দ আমরা খুঁজে পাই সময়ের কাছ থেকে। কেউ যদি আমাদের কাছ থেকে এই সময়কেই কেড়ে নেয়, তাহলে আমরা কীভাবে সুখী হয়ে বেঁচে থাকব? আমরাও যদি আমাদের সময়কে অন্য কাউকে দিয়ে দিতে থাকি, তাহলে আমাদের জীবন কোথায়? কীভাবে আমরা আমাদের ভেতরের মানুষকে গড়ে তুলব?
নাসিরুদ্দিন হোজ্জার একটা গল্প আছে যে এটা যদি বিড়াল হয় তাহলে কাবাব কোথায়। আবার এটাই যদি কাবাব হয় তাহলে বিড়ালটা কোথায়। তো এই জীবন যদি জীবন হয় তাহলে আসল জীবন কোথায়? তাই আমি এই তরুণদের কাছে বলব রবীন্দ্রনাথের একটি কথা:
‘বিশ্বরূপের খেলাঘরে কতই
গেলেম খেলে,
অপরূপকে দেখে গেলেম
দুটি নয়ন মেলে।’
এই যে অপরূপ বিশ্ব—তা আমাদের চোখ দিয়ে, আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে আমাদের জীবন দিয়ে যদি উপভোগ না করে যাই তাহলে আর এই জীবনের মানে কী? আমি সবাইকে অনুরোধ করব এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে। কেননা তোমরা এখন জীবনের পথে অগ্রসর হতে যাচ্ছ। তোমাদের এখনই ভাবার সময়। পরে আর এসব ভেবে কোনো লাভ হবে না। তোমাদের আগামী সময়ের জন্য শুভকামনা রইল। সকলকে ধন্যবাদ

Friday, May 10, 2019

PMP - In a nutshell

PMP at a glance:

https://worldofprojectmanagement.com/pmp/ -


Out of 200 questions, there will be 25 pretest questions and they would not affect your score. 

PMI does not disclose total passing score for any candidate but to pass the exams, according to an assessment by experienced trainers, you must correctly answer at least 61% of 175 live questions. There are no negative marks for wrong answers, so don't leave any question unanswered.


Resource Link:

  1. https://www.tutorialspoint.com/pmp-exams/pmp_exams_overview.htm

3P Consulting Limited

Foyezur Rahman, RMP, PMP, PRINCE2
https://www.linkedin.com/in/foyezur/
https://www.facebook.com/3PCLTD/videos/1226866784145259/